সংগঠন, ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। সংগঠন না থাকলে যেমনি ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না তেমনি ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসন ছাড়া সংগঠন কখনই অস্তিত্ব লাভ করে না । তাই অনেকে এদের সবাইকে সমার্থক গণ্য করেন । পরিভাষার দিক বিবেচনা করলে সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার পৃথক অস্তিত্ব রয়েছে । প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনাকে ব্যবস্থাপনা পর্যায় বিবেচনায় পৃথকভাবে নির্দিষ্ট করা হলে সেক্ষেত্রেও উভয়ের মধ্যে পৃথক রূপ প্রতিভাত হয় । সম্পর্ক নিরূপণের ক্ষেত্রে প্রতিটা বিষয়ে পৃথক ধারণা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. সংগঠন (Organization) : প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত উপকরণাদি সংহত ও সমন্বিত করার কৌশলকে সংগঠন বলে । সংগঠনকে প্রতিষ্ঠান অর্থে ধরা হলে-এটি হলো কতিপয় ব্যক্তির সংঘবদ্ধ সম্পর্কের কাঠামো । তাই প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনে কতিপয় ব্যক্তি লক্ষ্যার্জনের জন্য একত্রে কাজ করে । ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কেউ ঊর্ধ্বতন ও কেউ অধস্তন হিসেবে সম্পর্কযুক্ত থাকে । প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড যত বাড়ে ব্যবস্থাপনার পর্যায় বা স্তরও ততই বৃদ্ধি পায় । সংগঠনের বা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ স্তরে কর্মরত নির্বাহীদের কার্যকে প্রশাসন এবং মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ে কর্মরত ব্যবস্থাপকদের কার্যকে ব্যবস্থাপনা নামে আখ্যায়িত করা হয় ।
২. ব্যবস্থাপনা (Management) : উপকরণাদিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনের জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নেতৃত্ব দান ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকে ব্যবস্থাপনা বলে । মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণ যতোই উন্নত হোক না কেন ব্যবস্থাপনা কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা না হলে তা কার্যক্ষেত্রে কোনোই ফল দিতে পারে না । এরূপ উপকরণাদি কোথাও একত্রে থাকলেই তা সংগঠন হয় না তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগে সাজিয়ে তাদের প্রত্যেকের করণীয় নির্ধারণ করে দিতে হয় । আর এভাবেই ব্যবস্থাপনা সংগঠন পরিচালনায় কার্যকর শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখে ।
৩. প্রশাসন (Administration) : ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে প্রশাসক এবং তাদের কর্মপ্রয়াস বা প্রচেষ্টাকে প্রশাসন বলে। J. W. Sheultz (শিউলজ) তাই বলেছেন, ‘যারা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন এবং যাদের অধীনে সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনা উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে তাই প্রশাসন' । প্রশাসন হলো মানব দেহের মস্তিষ্কস্বরূপ । কারণ মস্তিষ্ক করণীয় নির্দেশ করে; যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা বাস্তবায়িত হয় । প্রশাসন প্রতিষ্ঠানে নীতি ও উদ্দেশ্য ঠিক করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থাপনা ও সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করে ।
সংগঠন, ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণে অলিভার শেল্ডন বিশেষভাবে প্রয়াস চালিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “শিল্পের অংশ হিসেবে ব্যবস্থাপনা মূলধন ও শ্রম থেকে আলাদা এবং এটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত । অংশগুলো হলো-প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও সংগঠন ।'
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে প্রশাসনের কাজ মস্তিষ্কের ন্যায় যা নীতি-পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে। সংগঠন কিভাবে চলবে ব্যবস্থাপনা তার পথ প্রদর্শন করে বা উপায়-উপকরণ কিভাবে কার্যকররূপে ব্যবহৃত হবে তার উপায় নির্দেশ করে । অন্যদিকে সংগঠন হলো উপকরণাদিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার উপায় । তাই বলা হয়ে থাকে সংগঠন বাহু, ব্যবস্থাপনা চক্ষু এবং প্রশাসন মস্তিষ্ক ।
আরও দেখুন...